হাওজা নিউজ এজেন্সি: ইরানের শাসক রেজা শাহ যখন হাওজায়ে ইলমিয়া তথা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছিলেন, তখন আয়াতুল্লাহ হাজ শেখ আব্দুল করিম হায়েরি তার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কোমকে শিয়া বিশ্বের হৃদস্পন্দনে পরিণত করেন। তাঁর এই রণকৌশল আজও তার সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করছে।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, পাহলাভী শাসন হাওজা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য দুটি পথ রেখেছিল:
১. কোম ও মাশহাদের মতো শহরে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করে তালিব ও শিক্ষকদের ইরাকের পবিত্র নগরীগুলোতে নির্বাসন
২. মাদ্রাসাগুলোকে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তর
প্রথম পথ রোধে শেখ আব্দুল করিম হায়েরি নাজাফ ও কারবালার পাশাপাশি কোমের হাওজাকে পুনরুজ্জীবিত করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। মাশরুতার পরবর্তী ধর্মনিরপেক্ষীকরণের ঢেউ ইরানকে উসমানীয় খেলাফতের পথে নিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে আলেমসমাজ দারুল ইফতারার মতো পরিণতির শিকার হতেন।
আলেমদের প্রজ্ঞা ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ধর্মীয় অধঃপতনের অভিজ্ঞতা এক অভিনব কৌশলের জন্ম দিয়েছিল। শেখ আব্দুল করিম রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকলেও রেজা শাহের সাথে কূটনৈতিক আচরণ করে হাওজা শিক্ষার ভিত্তি রক্ষা করেন। নাজাফ-কারবালার আলেমদের সমর্থন ও দেশীয় উলামায়ে কেরামের সহযোগিতায় তিনি কোমকে ধর্মীয়-সামাজিক প্রভাবের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন।
আয়াতুল্লাহ হায়েরির কৌশলগত পদক্ষেপ:
১. বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন না দেওয়া
২. রাজপরিবারের পর্দা সংক্রান্ত কেলেঙ্কারিতে হস্তক্ষেপ না করা
তিনি ফিলিস্তিন ইস্যুতেও সোচ্চার ছিলেন, রেজা শাহকে প্রতিবাদ টেলিগ্রাম পাঠিয়েছিলেন। এই ধারা পরবর্তীতে আয়াতুল্লাহ ব্রুজার্দি অব্যাহত রাখেন।
রেজা শাহের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সবচেয়ে বড় আঘাত ছিল জনগণ ও ধর্মীয় নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি। আয়াতুল্লাহ হায়েরি হাওজা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে দেশব্যাপী ধর্মীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। তাঁর এই ভিত্তিই পরবর্তীতে আয়াতুল্লাহ ব্রুজার্দিকে পাহলাভী দ্বিতীয়ের 'আধুনিক জাতীয়তাবাদ' নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শক্তি যুগিয়েছিল।
সূত্র: ইরানের ইসলামি বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল গবেষণা কেন্দ্র
আপনার কমেন্ট